তালমাখনা উপকারিতা
তালমাখনা আর তালমূলী; খুবই কাছাকছি দুটো নাম। তবে দুটো উদ্ভিদই পৃথক পরিবারের। দেখতেও আলাদা। আগে লিখেছিলাম তালমূলী নিয়ে; এবার তালমাখনা। চমৎকার ঔষধিগুণের এই গাছ আমাদের অতি পরিচিত। প্রচলিত অন্য নাম কুলেখাড়া। ইউনানি নাম তালমাখনা আর আয়ুর্বেদিক নাম কোকিলাক্ষা। গাছটির মাটির ওপরের অংশে যেসব রাসায়নিক উপাদান রয়েছে তা হলো- অ্যালকালয়েড, ফাইটোস্টেরল, স্টিগমাস্টেরল, লুপিয়ল, উদ্বায়ী তেল ও হাইড্রোকার্বন। ফুলের মধ্যে এপিজেনিন এবং বীজে তেল ও এনজাইম বিদ্যমান। তালমাখনার মূল ব্যবহার্য অংশ বীজ। এই বীজ পুষ্টিকর, শুক্রবর্ধক ও প্রফুল্লতা ধারক। লিউকোরিয়া,
শুক্রমেহ, যৌন দুর্বলতা ও স্নায়বিক দুর্বলতায় বীজ অত্যন্ত কার্যকর। বিশেষভাবে এই বীজ হজমকারক, বায়ুনিঃসারক ও পাকস্থলীর ব্যথা নিবারক। শরীরের পুষ্টি সাধন ও সাধারণ দুর্বলতায় ব্যবহার্য অংশ হলো ৩ গ্রাম পরিমাণ বীজ চূর্ণ। এই বীজ চূর্ণের সঙ্গে ১ গ্রাম পরিমাণ শতমূলী চূর্ণ মিশিয়ে দুধসহ প্রতিদিন সকালে খালিপেটে ও রাত্রে শোবার আগে খেতে হবে। শুক্রমেহ ও লিউকোরিয়ার ক্ষেত্রেও ব্যবহার্য অংশ হলো ৩ গ্রাম পরিমাণ বীজ চূর্ণ। এই বীজ চূর্ণের সঙ্গে ১ গ্রাম পরিমাণ তেঁতুলবীজ চূর্ণ মিশিয়ে প্রতিদিন ২ বার দুধসহ খেলে উপকার পাওয়া যাবে। যৌন ও স্নায়বিক দুর্বলতার ক্ষেত্রে গাছটির ব্যবহার্য অংশ ৩ গ্রাম পরিমাণ বীজ চূর্ণ। এই বীজ চূর্ণের সঙ্গে ১ গ্রাম পরিমাণ অশ্বগন্ধা চূর্ণ ও ৩ চা চামচ মধু মিশিয়ে প্রতিদিন ২ বার খেলে উপকার পাওয়া যাবে। তবে নির্দিষ্ট মাত্রার বেশি সেবন সমীচীন নয়। এতে পেটে বায়ু হতে পারে।
তালমাখনা (ঐুমৎড়ঢ়যুষধ ধঁৎরপঁষধঃধ) সাধারণত ৫০ সেমি থেকে ১ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। কাণ্ড থেকেই বহু শাখা-প্রশাখা বের হয়। ফুলের রং উজ্জ্বল বেগুনি লাল কিংবা বেগুনি সাদা। বীজ ছোট, গোলাকৃতির, দেখতে অনেকটা তিলের মতো, তবে বীজের রং গাঢ় খয়েরি। বীজগুলো পানিতে ভিজিয়ে রাখলে চটচটে কিংবা আঠালো হয়। এর ইংরেজি নাম ঝঃধৎ ঞযড়ৎহ। গাছটি বাংলাদেশের বিভিন্ন নিম্নভূমি অঞ্চলে, যেখানে বছরে কিছু সময়ের জন্য পানি থাকে সেখানে পাওয়া যায়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনেও দেখা যায়। ফুলের মৌসুম হেমন্ত থেকে শীতকাল পর্যন্ত বিস্তৃত। বীজ থেকে চারা হয়।